আজ ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এসিডে ঝলসানো শরীরের ক্ষত নিয়ে বিচারের অপেক্ষায় মাহমুদা!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার নওদাবাস ইউনিয়নে কেতকীবাড়িতে স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোক জনের দারা এডিসে ঝলসানো শরীর নিয়ে বিচারের অপেক্ষায় মাহমুদা বেগম।

মাহমুদা বেগম জানায়, বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে আমাকে নির্যাতন করতো আমার শ্বশুর বাড়ির লোক- জন। আমার অপরাধ হলো আমি দেখতে কালো। আমি কালো হওয়ায় স্বামীও আমাকে নিয়ে সংসার করতে চায় না। শুনেছি সে ঢাকায় আরও বিয়ে করেছে। আমি সংসার করার জন্য তাদের অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। তারপরও আমাকে এসিড দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

আমি কালো হওয়ায় আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমার গায়ে এসিড দিয়েছে। কালো হওয়া কি আমার অপরাধ? আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন এসিড আক্রান্তের শিকার মাহমুদা বেগম। এদিকে ঘটনার ৪১ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার প্রধান আসামি তার শ্বশুর আতোয়ার রহমান এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ার অস-হায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ওই নারী ও তার পরিবার। এসিড আক্রান্তের শিকার মাহমুদা বেগম এখন তার শরীরে এসিডের ক্ষত নিয়ে বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে বাবার বাড়িতে।

জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস ইউনিয়নের কেতকীবাড়ি গ্রামের আব্দুল মালেকের মেয়ে মাহমুদা বেগমের সাথে প্রায় ৪ বছর পূর্বে টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকুড়ি গ্রামের আতোয়ার রহমানের পূত্র হামিদুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী হামিদুল শ্বশুর আতোয়ার শাশুড়ি হামিদাসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন মাহমুদা বেগমকে কারণে অকারণে নির্যাতনসহ তালাকের হুমকি দিয়ে আসছে।

গত ১৩ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে শ্বশুর আতোয়ার রহমান ও শাশুড়ি হামিদা বেগমসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন মাহমুদা বেগমের গায়ে এসিড ঢেলে দেয়। এ সময় তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে মাহমুদা বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে হাতীবান্ধা হাসপাতাল পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
এ ঘটনায় পরের দিন ১৪ জুলাই মাহমুদা বেগমের বাবা আব্দুল মালেক বাদি হয়ে হাতীবান্ধা থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ আছিয়া বেগম নামে ওই নারীর এক ননদকে আটক করলেও ঘটনার ৪১ দিন অতিবাহিত হলেও প্রধান আসামি শ্বশুর আতোয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফলে মামলার বাদিসহ নির্যাতনের শিকার ওই নারী অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে ওই নারীর শ্বশুরবাড়ি গেন্দুকুড়ি এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, বিয়ের পর থেকে কারণে অকারণে শ্বশুর আতোয়ার ও শাশুড়ি হামিদা তাদের পুত্রবধূ মাহমুদাকে নির্যাতন করে। নানা অজুহাতে স্বামী হামিদুল প্রায় সময় বাহিরে থাকে। ওই নারীকে প্রতিবেশী কারো সাথে কথা বলতে দিত না। কোন প্রতিবেশীর সাথে কথা বললে তার উপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন।

তবে ওই নারীর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাবি, নিজের গাঁয়ে নিজে এসিড দিয়ে তাদের ফাঁসানো হচ্ছে। তারা ষড়ষন্ত্রের শিকার।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক আঙ্গুর মিয়া জানান, এ মামলার একজন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম জানান, এই মামলার একজন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধান আসামিসহ সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...